Barak UpdatesCultureBreaking News
আজ মকর সংক্রান্তি, লিখেছেন কৃষ্ণজ্যোতি দেব
মকর সংক্রান্তি, ভোগালি বিহু, লহরি, পোঙ্গল কত যে নাম এই পৌষ পার্বণের। পুরাণে উল্লেখ আছে, এই মকর সংক্রান্তির দিনেই অসুরদের সঙ্গে দেবতাদের যুদ্ধ শেষ হয়। ভগবান বিষ্ণু অসুরদের বধ করে তাদের ছিন্ন মাথা মন্দিরা পর্বতে পুঁতে রেখেছিলেন। তাই এই দিন অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দিনটিতেই মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। মহাভারতেও উল্লেখ আছে এই দিনটির। পিতামহ ভীষ্ম এই দিনেই শরশয্যায় ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন। আজকের এই দিনটিতেই মা গঙ্গা মহারাজা ভগীরথের পূর্বপুরুষদের উদ্ধার করে সাগরে মিলিত হয়েছিলেন। তাই আজকের দিনটিতেই গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন করা হয়।
এই দিনে মণিপুরে অনেকেই তাঁদের ঈশ্বর লাইনিং-থৌয়ের আরাধনা করেন। আজকের দিনেই অরুণাচল প্রদেশের ব্রহ্মকুণ্ডে রামায়ণ, মহাভারত ও কালিকা পুরাণের সূত্র ধরে বিভিন্ন দেবদেবীর আরাধনা করা হয়। বরাক উপত্যকায় আমরা যেভাবে মেড়া-মেড়ির ঘর জ্বালিয়ে দিনটি পালন করে থাকি, ঠিক সেরকম ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় মেজি-ঘর জ্বালানোর রীতি আছে। তামিলরা তেমনই কাঠকুটো জড়ো করে আগুন জ্বালান আর সেই আগুনে পুরনো পোষাক ও অন্যান্য জিনিস-পত্রের আহুতি দেন। এই দিনে তিলের তৈরি দ্রব্যাদি খাওয়ার আমাদের যেমন রীতি আছে, ঠিক তেমনি তামিলনাডুতে এইদিনে আখ ও তিলের তৈরি মিষ্টি খাওয়ার প্রচলন আছে।
পুরো দেশে মকর সংক্রান্তি নামটি প্রচলিত হলেও স্থানীয় নামেরও প্রচলন রয়েছে৷ যেমন মধ্যপ্রদেশে সরকত, ঝাড়খণ্ডে খিচড়ি পর্ব, গুজরাটে উত্তরায়ণ, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ভোগালি বিহু, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় লহরি, তামিলনাডুতে পোঙ্গল, কর্ণাটকে মকর সংক্রমণ, কাশ্মীরে শায়েন-ক্রাত ইত্যাদি। ভারতবর্ষের বাইরে নেপালে মাঘি নামে, থাইল্যান্ডে সংক্রান, লাওসে পি-মা-লাও, মায়াম্মারে থিং-ইয়ান এবং কম্বোডিয়াতে এই উৎসব মহাসংক্রান নামে পালিত হয়।
কারও মতে, সূর্যদেব এই দিনটিতে ছেলেকে নিয়ে মকর রাশির অধিপতি শনিদেবের বাড়িতে এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন। তাই এই দিনটিকে বাবা-ছেলের সম্পর্কের এক বিশেষ দিন হিসেবেও ধরা হয়।
আর বিজ্ঞান কী বলে ? সূর্যের গতি দুই প্রকার, উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণ। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় ২১ ডিসেম্বর তারিখটিতে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে মকর ক্রান্তির উপর অবস্থান করে। এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল আর উত্তর গোলার্ধে শীতকাল বিরাজ করে। এই বিশেষ দিনে, দিন সবচেয়ে ছোট আর রাত সবচেয়ে বড় হয়। ২১ ডিসেম্বরের পর থেকে সূর্যকিরণ ক্রমে উত্তর দিকে সরে যেতে থাকে। আর ক্রমে দিন বড় ও রাত ছোট হতে শুরু করে। শ্রাবণ থেকে পৌষ, এই ছয়মাস দক্ষিণায়ণ৷ আবার মাঘ থেকে আষাঢ় এই ছয় মাস উত্তরায়ণ। উত্তরায়ণের শুরু বলেই এই উৎসবও উত্তরায়ণ।